কৃষিতে অশনি সংকেত
- আপলোড সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৬:০২:৪১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৬:০২:৪১ পূর্বাহ্ন

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে মাটি নিংড়ে ফলানো হচ্ছে ফসল। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে এক জমিতেই বছরে ফলানো হচ্ছে ৪-৫টি ফসল। এতে স্বল্প মেয়াদে ফসলের উৎপাদন বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে মাটির উর্বরতা কমছে ভয়াবহভাবে। এ ছাড়া মাটির স্বাভাবিক পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ায় আবাদের খরচও ক্রমাগত বাড়ছে। কৃষকরা ফসল উৎপাদনের জন্য ক্রমাগত আরও বেশি সার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে হুমকির মুখে ভবিষ্যৎ কৃষি।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট ভূমির প্রায় ৭৫ শতাংশই এখন উর্বরতা ঘাটতিতে ভুগছে। প্রতি বছর প্রায় ১ শতাংশ হারে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। মাটিতে জরুরি পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, বোরন, জিংক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জৈব পদার্থের ঘাটতিতে ভেঙে পড়েছে মাটির স্বাস্থ্য। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, দেশে আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০ সালে জৈব পদার্থের ঘাটতি পাওয়া যায় প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া ফসফরাস ঘাটতিযুক্ত এলাকার পরিমাণ ৬৬ লাখ হেক্টর, পটাশিয়ামের ঘাটতিযুক্ত এলাকা প্রায় ৫২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর, সালফারের ঘাটতিযুক্ত এলাকা ৬৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর, বোরনের ঘাটতিযুক্ত এলাকা প্রায় ৫১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানেরও ঘাটতি পাওয়া গেছে মাটিতে।
ধারাবাহিকভাবে উর্বরতা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বাংলাদেশে ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উর্বরতা হ্রাস পাওয়ায় কৃষকদের আরও বেশি সার ব্যবহার করতে হচ্ছে, ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। বিগত ১০ বছরে সার ও কীটনাশকের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। উর্বরতা কমায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়াতে হচ্ছে। বেশি মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির পিএইচ স্তর পরিবর্তিত হচ্ছে, যা স্বাভাবিক পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করছে। জমিতে উপকারী কৃষিজীবাণুর পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা মাটির স্বাভাবিক শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল কুদ্দুস গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা একই জমিতে ৫-৬ বার ফসল ফলাচ্ছি। অধিক চাপে মাটির শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটিতে ৩.৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা অত্যাবশ্যক হলেও দেশের অধিকাংশ মাটিতে তা ১.৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। গাজীপুরের মাটিতে সর্বোচ্চ ১.৩৮ শতাংশ জৈব পদার্থ পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ মাটিতে ১ শতাংশের কম। জৈব পদার্থের ঘাটতিতে মাটির বুনট নষ্ট হয়ে যায়। মাটি পুষ্টি উপাদান ধরে রাখতে পারছে না। গাছের জন্য মাটিতে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রো ও ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস (পুষ্টি উপাদান) থাকে। বাংলাদেশে অনেক এলাকার মাটিতে এগুলোর ঘাটতি আছে। অনেক মাটিতে উপাদানগুলো এমন অবস্থায় থাকে যে, গাছ গ্রহণ করতে পারে না। তাই আলাদাভাবে প্রয়োগ করতে হয়। তবে কতটুকু প্রয়োগ করতে হবে তার জন্য মাটি পরীক্ষা জরুরি। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার দিয়ে ফলন বাড়াতে থাকলে হঠাৎ করেই ফলন বিপর্যয় হবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও বিভিন্ন জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য উৎপাদন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। -বাংলাদেশ প্রতিদিন
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ